তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জন্যই আমাদের এ বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে থাকব। শাবিপ্রবিকে অনন্য জায়গায় নিয়ে যেতে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করছি। শাবিপ্রবি দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য উদাহরণ। আমরা অন্যদের জন্য রোল মডেল।’
শাবিপ্রবিতে উপাচার্য হিসেবে যোগদানের তিনবছর পূর্তি উপলক্ষে ইউএনবিকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন অধ্যাপক ফরিদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এ অধ্যাপক ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট শাবিপ্রবির ১১তম উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন।
তিনি বলেন, ‘উপাচার্য হিসেবে আমি আমার দায়িত্বকালকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর যতগুলো সমস্যা দেখেছি তার মধ্যে অন্যতম ছিল সেশনজট। তবে নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষার মাধ্যমে বর্তমানে একটি শৃঙ্খলা চলে এসেছে এবং আমরা অল্প সময়ের মধ্যে এ সেশনজট থেকে মুক্ত হয়েছি।’
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে জবাবদিহির জায়গা শতভাগ নিশ্চিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিষয়ে নজর দেয়া বাদ পড়েনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন, জার্নাল প্রকাশে যে পরিমাণ ধীরগতি ছিল, তা আর এখন নেই। প্রতি বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন এবং ছয় মাস পর পর নিয়মিত জার্নাল প্রকাশিত হচ্ছে।’
‘আগের চাইতে ৫০ শতাংশের বেশি বাজেট বৃদ্ধি করা হয়েছে। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে হাত দেয়া সম্ভব হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন খাতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন করে এখন পর্যন্ত ১৪টি বাস যুক্ত হয়েছে, যা এ বছরের শেষ নাগাদ আরও বাড়বে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য উন্নয়নকর্মকাণ্ডের মধ্যে আধুনিক ক্যাফেটেরিয়া, অত্যাধুনিক ক্লাব, দৃষ্টিনন্দন গোলচত্বর, আধুনিক বেবি কেয়ার সেন্টার, প্রতিটি বিভাগে ছাত্র উপদেষ্টা নিয়োগ, মানসিক সাপোর্টের জন্য সার্বক্ষণিক মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ, শতাধিক সেরা শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের স্বাস্থ্য বীমায় নিয়ে আসা, শিক্ষকদের বাড়িভাড়া বৃদ্ধি, বিশ্ববিদ্যালয়কে সিটি-করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করা, সার্টিফিকেটে ব্লক-চেইন ব্যবহার অন্যতম,’ যোগ করেন তিনি।
গবেষণা খাতে উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ফরিদ বলেন, ‘বর্তমানে গবেষণা খাতে আর্থিক বরাদ্দ রয়েছে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। এছাড়া আইকিউএসির (ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল) মাধ্যমে শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে আমরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইতে অনেক ওপরে রয়েছি। প্রযুক্তিগত সেবার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সাফল্য রয়েছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের।’
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শাবিপ্রবি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ‘বেস্ট ডিজিটাল ক্যাম্পাস অ্যাওয়ার্ড’ পদক অর্জন করে বলেও জানান তিনি।
উপাচার্য বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক সংকট দূর করতে পেরেছি অডিট স্বচ্ছতার মাধ্যমে। দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শাবিপ্রবিই প্রথম যেখানে কোনো অডিট আপত্তি এবং কোনো ধরনের আর্থিক বিশৃঙ্খলা নেই। এছাড়া বিভিন্ন নিয়োগ ও ভাইবা বোর্ডেও স্বচ্ছতা থাকতে হয়। উপাচার্যের বড় বিষয় হচ্ছে বিভিন্ন নিয়োগে স্বচ্ছ থাকা।’
করোনাকালীন শাবিপ্রবির ভূমিকা নিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘সিলেটের মানুষের প্রত্যাশার জায়গা হচ্ছে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়। তাই আমাদের সিলেটের মানুষের পাশে থাকতে হবে। করোনাকালীন এ সময়ে শাবিপ্রবির আরটি পিসিআর ল্যাব এ অঞ্চলের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে এ ল্যাব চালু হওয়ার পর একদিনের জন্য বন্ধ হয়নি।’
এছাড়া করোনা পরবর্তীকালে শিক্ষার্থীরা যাতে সেশনজটে না পড়ে সেজন্য আর্থিক তহবিল গঠন করে তিন হাজার টাকা করে প্রদানসহ অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসের জন্য ইন্টারনেট সেবা প্রদান করার কথা জানান অধ্যাপক ফরিদ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর রিভিউ ক্লাসসহ অন্যান্য তদারকির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়ার কথাও জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বনায়ন কর্মসূচি নিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর এখন পর্যন্ত ১৪ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। আর এ অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে গিয়ে পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কাজ করা হবে না। অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের বনায়ন ব্যবস্থা ঠিক থাকবে। এখন থেকে এমনভাবে গাছ লাগানো হবে যাতে করে ভবিষ্যতে কোনো স্থাপনা নির্মাণের জন্য কোনো গাছ না কাটা হয়। এছাড়াও জরুরি প্রয়োজনে গাছ কাটতে হলে আমরা বনবিভাগকে জানাব।’
অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্পর্কে শাবি উপাচার্য বলেন, বর্তমানে ১২০০ কোটি টাকার আটটি প্রকল্পের কাজ চলছে।
তবে কিছু গোষ্ঠী এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন চায় না অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের জাহানার ইমাম হলের নামকরণ নিয়ে যেমন বিরোধিতা শুরু হয়েছিল, ঠিক বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে আমরা যে হল তৈরি করতে যাচ্ছি সেখানেও একই গোষ্ঠী বাধা তৈরি করতে চাচ্ছে। তবে সকলের মনে রাখা উচিৎ অপপ্রচার করে শাবিপ্রবির উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ করা যাবে না। আমরা প্রতিটি ভবন নির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তদারকি কমিটি গঠন করব যাতে সব কাজ সুষ্ঠু এবং সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য বলেন, বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং শূন্যের কোঠায়। মাদক নির্মূলে যেসকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল তা শতভাগ সফল হয়েছে। শাবিপ্রবিই দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে নবীন কোনো শিক্ষার্থী মাদকাসক্ত কিনা তা ডোপ টেস্টের মাধ্যমে পরীক্ষা করে তাদের এখানে ভর্তি করানো হচ্ছে গত বছর থেকে।